বাণিজ্যযুদ্ধের মূলে আইফোন?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারে চীনের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবেলায় প্রয়োজনে 'বাণিজ্যযুদ্ধে'র ( Trade War) ঘোষণা দিয়েছিলেন। চলতি সপ্তাহে এ বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা করতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন চাইনিজ পণ্যে অধিক শুল্কারোপ ও ফলশ্রুতিতে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা - এই হচ্ছে সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধের নীতি। তবে আসলেই এ বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মহলে।
চীনের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৩৭৫ বিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ, বছরে পণ্য আমদানী রফতানীতে সামগ্রিকভাবে চীন ৩৭৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য অধিক রফতানী করে থাকে। কিন্তু মনে রাখা দরকার, প্রকৃত আয় কিন্তু রফতানী মূল্যের সমান নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় অ্যাপল নির্মিত আইফোনের কথা। আইফোনের ডিজাইন করা হয় ক্যালিফোর্নিয়ায় অ্যাপল কার্যালয়ে আর উৎপাদন হয় চীনে ফক্সকনের কারখানায়। গবেষণা সংস্থা আইএইচএস মার্কিট বলছে প্রতিটি আইফোন এক্স এর উৎপাদন ব্যয় ৩৭০ ডলার। এর মধ্যে ১১০ ডলার ব্যয় হয় দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং থেকে ডিসপ্লে ক্রয়ে এবং ৪৪.৫ ডলার ব্যয় হয় জাপানের তোশিবা থেকে মেমরি চিপ ক্রয়ে। চীনে সংযোজন বাবদ ব্যয় হয় মোট উৎপাদন ব্যয়ের ৩ থেকে ৬ শতাংশ মাত্র। একটি পূর্ণাঙ্গ আইফোন এক্স এর মূল্য উৎপাদন পর্যায়ে ৪০০ ডলার, পাইকারীভাবে ৮০০ ডলার এবং খুচরা পর্যায়ে ১২০০ ডলার। এখন চীন এই উৎপাদন পর্যায়ে অপেক্ষাকৃত কম অবদান সত্ত্বেও রফতানীর ক্ষেত্রে অত্যন্ত বৃহৎ বলে প্রতিয়মান হয় শুধুমাত্র পূর্ণাঙ্গ পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানীর কারণে। উল্লেখ্য, চীন শুধুমাত্র বিগত ২০১৭ সালে ৭০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মোবাইল ও আনুষাঙ্গিক পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানী করে যা দুই দেশের সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতির ২২ শতাংশেরও বেশী।
এ অবস্থায় সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধে কোন এক পক্ষের নিরঙ্কুশ সুবিধা লাভের সম্ভবনা তাই ক্ষীণ। বরং পারস্পরিক বাণিজ্য নির্ভরতার কারণে উভয়পক্ষেরই ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
Comments
Post a Comment